সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ, খুন, চুরি ও ডাকাতি ইত্যাদি বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দ্বীনি শিক্ষা নিকেতন আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া (জমিরিয়া কাসেমুল উলুম পটিয়ার) সম্মানিত মোহতামিম মুফতি আবু তাহের কাসেমী নদভী হাফি.।
তিনি সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রতি আট বছরের নিষ্পাপ শিশুকন্যা আছিয়ার ওপর চালানো নৃশংস ধর্ষণ ও পাশবিক নির্যাতন আমাদের সমাজের চরম অধঃপতনের প্রতিচিত্র। এ ঘটনা কেবল আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি প্রকাশ করে না; বরং আমাদের বিচারব্যবস্থার ব্যর্থতাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে। এই অমানবিক ও বর্বরোচিত অপরাধ মানবতার জন্য কলঙ্কস্বরূপ। তাই আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই—এই নির্মম অপরাধের সঙ্গে জড়িত দোষীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে জনসমক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করতে হবে। তেমনিভাবে বন্দি স্বামীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে পবিত্র শবে কদরে রোজা ভাঙিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা সাবেক র্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিনসহ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ঘাপটি মেরে থাকা রাঘব বোয়ালদের প্রকাশ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে নিয়ে মুসলিম খলিফাগণ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্ষকের বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তি কার্যকর করেছেন। তাই আমরাও রাষ্ট্রের কাছে আহ্বান জানাই—ধর্ষকদের প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক, যাতে এমন ঘৃণ্য অপরাধের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
তিনি আরো বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, দেশে ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড ও নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং বর্তমান আইনের দুর্বলতার কারণেই সমাজে আজ অপরাধ প্রবণতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা ও উপযুক্ত শাস্তির অভাবসহ বিভিন্ন ফাঁকফোকরে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
আমরা মনে করি এবং বিশ্বাস করি, বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থা ইসলামি ন্যায়বিচারের আলোকে সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আইনের ভিত্তিতে গঠিত বর্তমান বিচারব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও অপরাধীদের জন্য আইনের ফাঁকফোকর তৈরির ফলে নারীর নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। বিদ্যমান সেক্যুলার ব্যবস্থায় ইসলামি ন্যায়বিচারের অভাবে ধর্ষণ ও সহিংস অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এছাড়া কঠিন প্রমাণ ও আইনি জটিলতার কারণে ভুক্তভোগীরা বিচার পেতে নানা বাধার সম্মুখীন হয়, যা অপরাধ দমনে বড় অন্তরায়। ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে উদ্ভূত এই আইন সাধারণ জনগণের ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এটি প্রভাবশালী অপরাধীদের আশ্রয় দেয়, যা সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিশেষে সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন—দেশের বর্তমান আইন ও বিচারব্যবস্থাকে ইসলামের ন্যায়বিচারমূলক আদর্শের ভিত্তিতে সংস্কার করুন, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা দূর করুন এবং সকল ধর্ষক ও অপরাধীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকাশ্যে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করুন।
বার্তাপ্রেরক
হাফেজ মাওলানা জাফর সাদেক
সিনিয়র শিক্ষক, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।