আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ (কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড) সরকার স্বীকৃত জাতীয় ৬টি শিক্ষা বোর্ডের অন্যতম। এটি আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কুতবে যামান আল্লামা মুফতি আজিজুল হক (রহ.) কর্তৃক (১৯৫৯ ইংরেজী, মোতাবেক ১৩৩৮ হিজরিতে) প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এর কার্যালয় আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় অবস্থিত। সূচনালগ্ন থেকে সুনির্দিষ্ট সংবিধানের অধীনে ‘আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ’—এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। নিয়ম অনুযায়ী সংবিধানের সংযোজন—বিয়োজন হয়েছে। সর্বশেষ ১২/১২/১৯৯২ ইংরেজী সনে সংবিধানটি সংশোধিত ও অনুমোদিত হয়ে মুদ্রিত ও প্রচারিত হয়।
সেখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, ইত্তিহাদের প্রধান কার্যালয় : আল—জামিয়া আল—ইসলামিয়া পটিয়া। তেমনি ২নং ধারায় উল্লেখ আছে যে, ‘‘এর কার্যকরী করণের সাথে সাথে আঞ্জুমানের পূর্বের যাবতীয় ‘‘দস্তুরুল মাদারিস” রহিত গণ্য হবে”। সুতরাং পূর্বের কোন দস্তুরে (শর্তসাপেক্ষে) প্রধান কার্যালয় পরিবর্তনের কথা থাকলেও তা বর্তমানে রহিত হিসেবে গণ্য হবে।
বিশেষত বিগত ৩রা নভেম্বর ২০২১ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের সাধারণ সভা ও শুরা বৈঠকের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক জামিয়া পটিয়ার ক্যাম্পাসে ইত্তেহাদের স্থায়ী অফিসের জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ আরম্ভ হয়। বর্তমানে ভবনটির কাজ প্রায় সম্পন্ন। সুতরাং হঠাৎ করে কারো ইচ্ছা পূরণের উদ্যেশ্যে ‘‘আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ’’—এর প্রধান কার্যালয় পরিবর্তন করার কোন সুযোগ নেই।
‘আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ’’—এর সভাপতির পদটি একটি সাংবিধানিক পদ। জামিয়া পটিয়ার মুহতামিমগণ পদাধিকার বলে এই বোর্ডের সভাপতি মনোনিত হন। যেমন, বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম কুতবে যামান মুফতি আজিজুল হক রহ., অতঃপর জামিয়া পটিয়ার ২য় মুহতামিম আল্লামা হাজী ইউনুস সাহেব রহ. তারপর জামিয়া পটিয়ার ৩য় মুহতামিম আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী রহ. অতঃপর ৪র্থ মুহতামিম আল্লামা নুরুল ইসলাম কদিম সাহেব রহ. বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। অতঃপর আল্লামা মুফতি আব্দুল হালীম বুখারী রহ. জামিয়ার মুহতামিম হন। তিনিও পদাধিকার বলে সাংবিধানিকভাবে আঞ্জুমানের সভাপতির পদ অলংকৃত করার কথা ছিল, কিন্তু তিনি আল্লামা সুলতান যওক সাহেবকে বিশেষ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সভাপতি মনোনিত করেন। আর তিনি মহসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ইন্তিকালের পর ২৮/০৯/২০২২ইংরেজী তারিখে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযা সাহেব জামিয়া পটিয়ার মুহতামিম হওয়ার সুবাদে পদাধিকার বলে আঞ্জুমানে ইত্তিহাদুল মাদারিস বাংলাদেশে—এর মহাসচিব মনোনিত হন।
বিগত ২৮/০৯/২০২২ইং. সালে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজা আওয়ামী এমপি—মন্ত্রী,পুলিশ—প্রশাসনসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে নানারকম লবিং ও অনিয়ম করে জামিয়া পটিয়ার মুহতামিম হন। কিন্তু ২৮/১০/২০২৩ ইং তারিখে তার অহরহ অনিয়ম, ছাত্র—শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ, যথাসময়ে শুরার অধিবেশন আহ্বান না করা ও বিভিন্ন অসাংবিধানিক কার্যক্রমের কারণে জামিয়ার ছাত্র—শিক্ষকদের চরম অনাস্থা ও অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে সংঘঠিত ছাত্র আন্দোলনের চাপে তিনি জামিয়ার মুহতামিমের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ফলে পদাধিকার বলে প্রাপ্ত তার আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ—এর মহাসচিবের পদটিও সাংবিধানিকভাবে শূণ্য হয়ে যায়।
তবেএরপরেও তিনি চরম লোভাতুর হয়ে জামিয়ার দুটি সংস্থা; তথা (১) আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস এবং (২) বাংলাদেশ তাহফিজুল কুরআন সংস্থা নিয়ে নানা রকম ষড়যন্ত্র এবং ন্যাক্কারজনক চক্রান্তে মেতে আছেন।
বিগত ২৬/১১/২০২৩ ইং তারিখে তিনি ইত্তেহাদের সাবেক অফিস সহকারী মাওলানা সাঈদুল হক ও ড্রাইভার নাছিরের যোগসাজশে আঞ্জুমানের কার্যালয় থেকে জরুরী ফাইল—পত্র, গাড়ি ইত্যাদি চুরি করে নিয়ে যান। এছাড়া তার হাতে মজুদ থাকা ৯৯,৩১,১৫৯ (নিরান্নব্বই লক্ষ একত্রিশ হাজার একশত উনষাট) টাকা আত্মসাৎ করে নিয়ে যান।
অপরদিকে ইত্তেহাদের সাবেক সভাপতি আল্লামা সুলতান যওক সাহেব দামাত বারাকাতুহু জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হওয়ায় ইত্তেহাদের কার্যক্রম পরিচালনায় অপারগ হওয়া সত্ত্বেও তার নাম ব্যবহার করে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সাহেব হামলা-মামলাসহ নানাবিধ ফেতনা-ফাসাদে লিপ্ত আছেন। ফলে ইত্তাহাদের কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য যে, গত ১৬/১২/২০২৩ ইং তারিখে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ’র নানামুখী ফেতনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে ইত্তেহাদের সিনিয়র সহ—সভাপতি জামিয়ার শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি হাফেজ আহমদ উল্লাহ সাহেব দামাত বারাকাতুহ ইত্তেহাদের মজলিসে শুরার অধিবেশন আহবান করেন। উক্ত মজলিসে শুরায় সর্বসম্মতিক্রমে আল্লামা মুফতি আহমদ উল্লাহ সাহেবকে সভাপতি এবং জামিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি একরাম হোসাইন অদুদিকে মহাসচিব নির্বাচিত করে একটি নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। উক্ত কমিটি অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে ইত্তাহাদের কার্যক্রম আঞ্জাম দিতে থাকে।
অতঃপর স্বাভাবিক নিয়মানুসারে গত ১২/৮/২০২৪ ইং মোতাবেক ৬/২ /১৪৪৬ হি. রোজ সোমবার সকাল ১১ ঘটিকায় আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার দারুল হাদিসে আঞ্জুমানের সভাপতি আল্লামা মুফতি হাফেজ আহমাদ উল্লাহ সাহেব দামাত বারাকাতুহুর সভাপতিত্বে ইত্তেহাদুল মাদারিসের বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।এতে ৪ শতাধিক মাদ্রাসার পরিচালক ও নাজেমগণের উপস্থিতিতে ৮ সদস্যের সর্বোচ্চ পরিষদ, ৭৩ সদস্যের শুরা কমিটি, ০৯ সদস্যের নির্বাহী কমিটি, ০৭ সদস্যের পরীক্ষা কমিটি এবং ০৮ সদস্যের নেসাব কমিটি গঠন করা হয়।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আল্লামা মুফতি হাফেজ আহমদ উল্লাহ সাহেব দামাত বারাকাতুহুমকে পুনঃ সভাপতি এবং জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মুহতামিম আল্লামা মুফতি আবু তাহের কাসেমী নদভী সাহেবকে নির্বাহী সভাপতি,জামেয়ার সিনিয়র মহাদ্দিস মাওলানা মুফতি একরাম হোসাইন অদুদি সাহেবকে মহাসচিব এবং জামিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুল জলিল কওকব সাহেব কো—মহাসচিব করা হয়।
এ সাহসী পদক্ষেপের ফলে জামিয়ার সুনিবিড় তত্ত্বাবধানে শক্তিশালী এই কমিটির পরিচালনায় ইত্তেহাদুল মাদারিস স্বমহিমায় সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের সাথে এ কথা স্মরণ করে দিতে হচ্ছে যে, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযা সাহেব চরম দুর্লোভের বশবর্তী হয়ে জামিয়ায় বারবার সন্ত্রাসী হামলা ও মিথ্যা মামলা দ্বারা জামিয়া দখল কিংবা বন্ধ করার সকল অপচেষ্টায় বিফল হয়েছেন। আল্লাহ পাকের অফার দয়া ও রহমতে জামিয়া আজও স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
তবে আজও মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজা সাহেব ইত্তেহাদ এবং তাহফীজের কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার এবং সংস্থাদ্বয়ের কার্যক্রম পরিচালনায় বিঘ্নতা সৃষ্টি করণ অব্যহত রেখেছেন।
জামিয়ার মুরুব্বিরা ধৈর্যের পরিচয় দিলেও তিনি থামেননি।বর্তমানে তিনি জামিয়ার শায়খুল হাদিস, ইত্তেহাদুল মাদারিসের সভাপতি, হাজার হাজার উলামায়ে কেরামের মুরুব্বী ওস্তাজ, স্বয়ং মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামজার বুখারীর ওস্তাদ মুফতি হাফেজ আহমদ উল্লাহ সাহেবকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জন বরেণ্য আলেমসহ মোট ৩৭ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার মত চরম দৃষ্টতা প্রদর্শন করেছেন।
আমরা তার এহেন ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
স্মরণ রাখতে হবে যে, ‘আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ’ জামিয়া পটিয়ার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি বোর্ড। এটি জামিয়া পটিয়ার একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। আগামীতেও তা জামিয়া পটিয়ার অধীনেই থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
জ্ঞাতব্য যে, জামিয়া কর্তৃপক্ষ সদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আইনি প্রক্রিয়ায় আইনি মাধ্যমে এর যথাযথ জবাব প্রদান করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমীন।


