জামিয়া পটিয়ায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান
আজ ২৩ শে জিলকদ ১৪৩৯ হিঃ মোতাবেক ৬ই আগষ্ট ২০১৮ খৃষ্টাব্দ রোজ সোমবার বাদে যোহর জামিয়ার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ছাত্রদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মুঈনে মুহতামিম আল্লামা আবু তাহের নদভী হাফিজাহুল্লা এবং সভাপতিত্ব করেন জামিয়ার প্রধান পরিচালক আল্লামা মুফতি আব্দুল হালিম বোখারী হাফিজাহুল্লাহ। উপস্থিত ছিলেন জামিয়ার প্রবীণ মুহাদ্দিস মুফতি আহমদুল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ, মুফতি শামসুদ্দিন জিয়া হাফিজাহুল্লাহ, আল্লামা আমিনুল হক হাফিজাহুল্লাহ সহ জামিয়ার অন্যান্য মুহাদ্দিস ও শিক্ষকমণ্ডলী। মেধাবী ছাত্রদের তালিকা পাঠ করেন জামিয়ার শিক্ষক মাওলানা নুরুল আবছার হাফিজাহুল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা বোখারী হাফিজাহুল্লাহ বলেন, গতবছর পরীক্ষার পূর্বে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। যে কোন পরীক্ষার পর পুরস্কৃত করা একটি চিরাচরিত নিয়ম। হযরত আদম আঃ থেকে এই ধারা চালে আসছে। মহান আল্লাহ হযরত আদম আঃ এবং ফিরিস্তাদের কাছ থেকে পরীক্ষা নিলেন। আদম আঃ পাস করলেন, তাই আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করলেন। তাকে জগতের জন্য খলিফা নির্বাচিত করলেন।
তেমনি হযরত ইবরাহীম আঃ-কে আল্লাহ অনেক পরীক্ষা করেছেন। দশাধিক পরীক্ষায় তিনি ফুল মার্ক পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাই আল্লাহ তা’য়ালা ‘ফা আতাম্মা হুন্না’ (তিনি তা পূর্ণ করেছেন) বলেছেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁকে পুরস্কৃত করেছেন। তাঁকে জগতবাসীর জন্য ইমাম বানিয়েছেন। ‘ইন্নি জা ইলুকা লিন-নাসি ইমামা’ বলেছেন। তাই মুসলিম জাতির পিতা হলেন ইবরাহীম আঃ।
তবে তিনি পরবর্তীদের জন্যও আল্লাহর দরবারে এই দোয়া করেন যে আমার বংশধারায় এই ইমামত যেন অবশিষ্ট থাকে। তখন আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করে বলেন, আমি জালিমদেরকে এই নেয়ামত দান করবো না, ‘লা ইয়ানালু আহদীয যালিমীন’।
তেমনি আজ আমরা আমাদের মেধাতালিকায় উর্ত্তীণ ছাত্রদেরকে পুরস্কৃত করবো। এরা হলো ঐ সকল ছাত্র যাঁরা সদা মেহনত করেছে। জামিয়ার নিয়ম-কানুন মেনে চলেছে। অযথা ঘুরা-ফেরা করেনি, সময় নষ্ট করেনি। শিক্ষকমন্ডলীর কথা মান্য করে চলেছে। তাই আজ তারা পুরস্কৃত হচ্ছে। যারা পুরস্কৃত হচ্ছে তারা এটিকে আল্লাহর নেয়ামত মনে করবে। আর যারা এবার পুরস্কৃত নয়, তারা আগামীর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। মনে রাখবে তোমাদের মধ্যেই আগামী দিনের মুহাদ্দিস, মুফতি নিহিত আছে। সুতরাং আজ যদিও তোমরা শিক্ষার্থী, কিছুদিন পরেই তোমরা হবে জাতির কর্ণধার। তাই তোমাদেরকে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। সদা দরসে উপস্থিত থাকতে হবে।
আমার এক ছাত্র ছিল। তার নাম ইমরান। সে আমার কাছে মিশকাত শরিফ ও তিরমীযী শরিফ পড়েছে। এক দিনের জন্যও সে অনুপস্থিত ছিল না। আমার সব তকরীর সে নোট করেছে। এখান থেকে ফারিগ হয়ে দেওবন্দে দাখিলা নিয়েছে। সেখানে পরীক্ষায় সে ফাস্ট হয়েছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম এটি কিভাবে সম্ভব হলো। তখন সে বলল, আমি হুজুরের তাকরীরগুলো নোট করেছি। মূলতঃ সেগুলো দিয়েই আমি পরীক্ষায় ফাস্ট হয়েছি। সে এখন এক জামিয়ার পরিচালক। বোখারী শরিফের দরস দেন। নিজেই বাংলাতে একটি বোখারী শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করেছে।
তেমনি তোমরাও আগামী দিনে এই ধরণের বড় বড় কাজগুলো আঞ্জাম দিতে সক্ষম হবে যদি এখন নিজেদের সময়কে মূল্যায়ন করতে পারো। আল্লাহ সকলকে তাওফীক দান করুন।
উল্লেখ্য যে, এ বছর দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষায় সম্মিলিত ৬ বোর্ড থেকে অংশ নিয়েছিলেন ২০ হাজার ৭৪৯ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্য থেকে ৪০ তম পর্যন্ত মেধাতালিকা ঘোষণা করেন সম্মিলিত বোর্ড ‘হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যাহ’। এই সেরা চল্লিশে জামিয়া পটিয়ার মোট ১২জন মনোনিত হয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে এবং সেরা প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি লাভ করে জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া। আল্লাহ এই ধারা অব্যাহত রাখুন, আমীন।
পুরস্কৃত শিক্ষার্থীদের তালিকা:
মেধা তালিকার সেরা দশে যে ৩ জন:
২য় স্থানে: মুহাম্মদ খুবাইব রাজি।
৩য় স্থানে: মুহাম্মদ আয়াতুল্লাহ।
৮ম স্থানে: হুযাইফা।
আরো যারা পুরস্কৃত হলেন:-
১৫ তম : মুহাম্মদ ইকরাম
১৬ তম : মুহাম্মদ ইউছুফ
২৫ তম : মুহাম্মদ আবু তাহের
২৯ তম : মুহাম্মদ ওমর ফারুক
২৯ তম : মুহাম্মদ মুহিবুল্লাহ
৩০ তম : আব্দুছ ছবুর
৩২ তম : নুরুল হাসান
৩৩ তম : মুহাম্মদ মঈন উদ্দিন
৩৯ তম : মুহাম্মদ আবু দরদা
পরিশেষে জামিয়ার প্রবীণ মুহাদ্দিস আল্লামা মুফতি হাফেজ আহমদুল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ দোয়া পরিচালনা করেন। শিক্ষার্থীদের কামিয়াবী ও দেশের পরিস্থিতির জন্য কায়মানোবাক্যে দোয়ার মাধ্যমে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।