বিষয়: বড় আওয়াজে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আমাদের গ্রামে একটি আলেম পরিবারের নিয়ম হল তারা সকালে এক সাথে বড় আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াত করে না। বরং একজন প্রথমে বড় আওয়াজে তেলাওয়াত করে, পরে দ্বিতীয় জন। অনেক সময় সকালে এক সাথে তেলাওয়াত করে কিন্তু চুপে চুপে। অথচ আমাদের দেশের দস্তুর হচ্ছে সকলেই এক সাথে বড় আওয়াজে কুআন শরীফ পড়ার, এখন প্রশ্ন হল- وإذا قرئ القرأن فاستمعو له وأنصتوا إلخ আয়াতের হুকুম কি একসাথে তেলাওয়াতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? অথচ আমাদের জামিয়ার মসজিদে এক সাথে হাজারো ছাত্র বড় আওয়াজে সূরা ইয়াসীন তেলওয়াত করে থাকে। বিষয়টির শরয়ী সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন।
নিবেদক
এনায়াত করীম
দরবেশ পাড়া, চকরিয়া।
উত্তর: এক সাথে তেলাওয়াত করা হলে নিম্ন আওয়াজে তেলাওয়াত করা উত্তম। হ্যাঁ! শব্দ করে তেলাওয়াত করার অনুমতি রয়েছে। এতে وإذا قرئ القرأن فاستمعو له وأنصتوا إلخ আয়াতের বিপরীত হবেনা। কারণ বহু ওলামায়ে কেরামের মতে ঐ আয়াত নামাযে তেলাওয়াতের বেলায় প্রযোজ্য। আর নামাযের বাহিরে তেলাওয়াতের বেলায় প্রযোজ্য নয়। উপরন্তু তেলাওয়াতে কোরআন শরীফের সম্মান ও হক আদায় করণার্থে استماع وإنصات (শোনা আর চুপ থাকা)-এর হুকুম। সুতরাং যারা স্বয়ং তেলাওয়াতে রত আছে তারা কোরআনের বড় হক্ব তথা তেলাওয়াতে রত রয়েছে। তাদের জন্য استماع وإنصات (শোনা আর চুপ থাকা)-এর হুকুম হবে না। কাজেই সকলেই উচ্চস্বরে পাঠ করলে ঐ আয়তের বিপরিত হবেনা। যেমনিভাবে হেফয বিভাগের ছাত্ররা একসাথে বড় আওয়াজে তেলাওয়াত করে থাকে।
শরয়ী প্রমানাধী
الدر المختارمع الشامي :১/৩৬৬
فروع في القراءة خارج الصلاة قوله: (يجب الاستماع للقراءة مطلقا) أي في الصلاة وخارجها، لان الآية وإن كانت واردة في الصلاة على ما مر فالعبرة لعموم اللفظ لا لخصوص السبب، ثم هذا حيث لا عذر، ولذا في القنية: صبي يقرأ في البيت وأهله مشغولون بالعمل يعذرون في ترك الاستماع إن افتتحوا العمل قبل القراءة وإلا فلا، وكذا قراءة الفقه عند قراءة القرآن.
অর্থ, কুরআনের তিলাওয়াত শুনা সর্বক্ষেত্রে ওয়াজিব, তথা নামাযের ভিতরে হোক, কিংবা বাহিরে। কেননা, আয়াতটি যদিও নামায সম্পর্কে নাযিল হয় (যেমন পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) কিন্তু শব্দের ব্যাপকতাই উদ্দেশ্য হয়, অতরণের বিশেষ পেক্ষাপট নয়। কিন্তু এটি দর্তব্য হবে যেখানে কোন উজর-অপারগতা নেই সেখানে। কারণ, ‘কুনইয়্যা’ নামক কিতাবের লিখক লিখেছেন, একজন ছোট ছেলে ঘরে তিলাওয়াত করছে আর তার পরিবারের লোকেরা কাজে ব্যস্ত আছে। তাহলে তারা যদি তিলাওয়াত আরম্ভ করার পূর্বে কাজ আরম্ভ করে থাকেন তাহলে তিলাওয়াত না শুনার ক্ষেত্রে তাদেরকে অপরাগ ধরা হবে, অন্যথায় নয়। তেমনি কুরআন তিলাওয়াতের সময় ফিকহ অধ্যয়নের বিধানও একইরূপ বিবেচিত হবে। (দুররে মুখতার- ফতোয়ায়ে শামী ১/৩৬৬)
فتاوي هندية:৪/১৯২
ويكره للقوم أن يقرئ القرآن جملة لتضمنها ترك الاستماع والإنصات للمامور بها كذا في القنية وفيه أيضا ولا بأس بإجتماعهم علي قراءة الإخلاص جهرا عند ختم القرأن ولو قرأ أحد واستمع الباقون فهو أولي.
অর্থ, সম্মিলিতভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরূহ। কেননা, তাতে কুরআন শ্রবণ করার বিধান ও কুরআন তিলাওয়াত চলাকালে চুপ থাকার বিধান লঙ্গীত হয়। এরূপ বিধান ‘কুনইয়্যা’ নামক গ্রন্থেও রয়েছে। সেখানে আরো আছে কুরআন খতমের সময় একত্রিত হয়ে সূরায়ে ইখলাছের তিলাওয়াত করা; অসুবিধার কিছু নয়। তবে, একজন তিলাওয়াত করে অন্যরা শুনলে তা উত্তম হয়। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী ৪/১৯২)
উত্তর প্রদানে-
ফতওয়া বিভাগ আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া,চট্টগ্রাম
মেইল- daruliftapatiya@gmail.com