উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম দ্বীনী মারকাজ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূত দারুল উলূম দেওবন্দ পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আট দফা মূলনীতি প্রণীত ও গৃহীত হয়েছিল এবং যা উছুলে হাশতগানা নামে পরিচিত। উক্ত আট দফা মূলনীতি এখানে লিপিবদ্ধ করা গেল।
১.মাদ্রাসার আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করার প্রতি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে গভীর দৃষ্টি রাখতে হবে । নিজে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করবেন এবং অন্যান্যদের দ্বারাও চেষ্টা চালাবেন। মাদ্রাসার হিতাকাংখীগণকেও এ কথাটি সর্বদা মনে রাখতে হবে।
২.ছাত্রদের খাওয়ার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে বরং ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারে মাদ্রাসা হিতাকাংখীগণকে সম্ভাব্য সকল প্রকার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে ।
৩.মাদ্রাসার পরামর্শদাতাগণকে (কর্তৃপক্ষকে) সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে, যাতে মাদ্রাসার পরিচালনা ব্যবস্থা সুন্দর, সুখ ও নিয়মতান্ত্রিক হয়। নিজের মতকে ঠিক রাখার জন্য যেন বাড়াবাড়ি করা না হয়। আল্লাহ না করুন, যখন এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে যে- আপন মতের বিপরীত মত গ্রহণ বা পরামর্শ গ্রহণের মত সহনশীলতা পরামর্শদাতাগণের থাকবে না, তখন এ মাদ্রাসার বুনিয়াদ টলমল হয়ে পড়বে ।
মোট কথাঅন্তরের অন্তঃস্থল থেকে পরামর্শ দেবার সময় এবং তার আগে পরেও মাদ্রাসার সুব্যবস্থা ও সুশৃংখলার প্রতি পূর্ণ খেয়াল রাখতে হবে । আর কোন বিষয়ে বাড়াবাড়ি যেন না হয় যেন পরামর্শদাতাগণ মতামত প্রকাশে কোন প্রকার দ্বিধাগ্রস্থ না হয়ে পড়েন। আর উপস্থিত শ্রোতাগণও যেন তা ধৈর্য ও নেক নিয়্যতের সাথে শ্রবণ করেন ।
অর্থাৎ এরূপ খেয়াল রাখতে হবে যে অন্যের কথা যদি বুঝে আসে- তা আমাদের মতের বিপরীতই হউক না কেন- অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে মেনে নিব ।
এবং এ কারণেও এটা জরুরী যে, মুহতামিম সাহেব সর্বদা পরামর্শ সাপেক্ষে কার্যাবলীর ব্যাপারে যোগ্য পরামর্শদাতাদের থেকে অবশ্যই পরামর্শ গ্রহণ করবেন, তাঁরা মাদ্রাসার নিয়মিত পরামর্শদাতা হ’ন অথবা ইলম ও অভিজ্ঞতার অধিকারী এবং মাদ্রাসার হিতাকাংখী কোন আগন্তুকই হন। এবং এ কারণেও জরুরী যে, যদি ঘটনাক্রমে কোন কারণে পরামর্শদাতাদের থেকে পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ না ঘটে এবং যদি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিবর্গের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তখন কেউ শুধু এ অজুহাতে যেন অসন্তুষ্ট না হন যে, আমাকে কেন জিজ্ঞেস করা হ’ল না। অবশ্য মুহতামিম সাহেব যদি কাউকেই জিজ্ঞেস করে না থাকেন তখন অবশ্য পরামর্শদাতাগণ আপত্তি তুলতে পারেন।
৪.মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দের সমমনা হওয়া একান্ত আবশ্যক যেন দুনিয়াদার আলেমদের ন্যায় অহংকারী এবং অন্যকে হেয় প্রতিপন্নকারী না হন । আল্লাহ না করুন যখন এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে, তখন এ মাদ্রাসার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে ।
৫.পূর্ব নির্ধারিত দরস বা পরে পরামর্শক্রমে যা স্থির হয়, যথা সময়ে তা সমাপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। নচেৎ এ মাদ্রাসা জমে উঠবেনা, উঠলেও তা অর্থহীন হবে ।
৬.যে পর্যন্ত এ মাদ্রাসার আয়ের কোন নিশ্চিত উপায় অবলম্বিত না হবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল থাকলে ইনশা আল্লাহ সে পর্যন্ত এ মাদ্রাসা এভাবেই চলতে থাকবে। আর যদি আয়ের নিশ্চিত ব্যবস্থা অবলম্বিত হয়, যেমন- জায়গীর (জায়গা জমি, জমিদারী) বা কারখানা, তেজারত বা কোন নির্ভরযোগ্য ধনী ব্যক্তির অলংঘনীয় ওয়াদা, তখন মনে হয় যে, যে আশা ও ভীতি আল্লাহর দিকে রুজু হওয়ার পুজি তা হাতছাড়া হয়ে যাবে এবং গায়েবী মদদ বন্ধ হয়ে যাবে। আর পরিচালকদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হবে ।
৭. সরকার এবং বিত্তবানদের অংশগ্রহণও অত্যধিক ক্ষতিকর মনে হচ্ছে।
৮.ঐ সকল লোকদের চাঁদা বরকতময় মনে হচ্ছে, যাঁরা নামের আশায় চাঁদা প্রদান করেন না। মোট কথা চাঁদাদাতাদের নেক নিয়্যতই প্রতিষ্ঠান অধিক স্থায়ী হবার পূজি বলে মনে করি ।