সমগ্র বিশ্বের মুসলিম জাতির প্রতি জামিয়া পটিয়ার প্রধান মুফতির আকুল আবেদন
‘‘যে সকল পবিত্রস্থানে সর্বদা আল্লাহর রহমতের বারিধারা নাযিল হতে থাকে; যেমন, হারামাইন শারীফাইন, মসজিদ ও দ্বীনী মাদরাসা ইত্যাদি; সেগুলো খুলে দিন এবং সেখানে গিয়ে তাওবা-ইস্তিগফার ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত কামনা করুন। নতুবা এর চেয়ে আরো ভয়াবহ মহামারি ও আযাবের আশঙ্কা রয়েছে।”
দু’এক বছর ধরে সারা বিশ্বের করোনা ভাইরাস নামের এক ভয়াবহ মহামারি চলছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী?
কুরআন-হাদীসের প্রতি গভীর দৃষ্টিপাত করলে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, দুনিয়ার মধ্যে যখন আল্লাহর নাফরমানি যথা, চুরি-ডাকাতি, যেনা-ব্যাভিচার, সমকামিতা, সুদ-ঘুষ, মদ্য ও শরাবপান ইত্যাদি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে সতর্ক করার জন্য দুনিয়াবী কিছুটা শাস্তি হিসেবে এ ধরনের ব্যাপক ঘাতক মহামারি রোগ হিসেবে নাযিল হয়ে থাকে। যেন মানুষ আল্লাহর নাফরমানি পরিহার করে এবং আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগীর দিকে ধাবিত হয়।
বস্তুতঃ আল্লাহ তাআলা জিন ও মানবজাতিকে তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। যেমন কুরআন শরীফে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإِنسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ . অর্থাৎ আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, যেন তারা আমার ইবাদত করে, (যারিয়াত-৫৬)। আল্লাহ তাআলা অন্যত্রে ইরশাদ করেন- وَلَنُذِيقَنَّهُمْ مِنَ الْعَذَابِ الأَدْنَى دُونَ الْعَذَابِ الأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ অর্থাৎ কিয়ামতের পূর্বে আমি তাদেরকে অবশ্যই ছোট শাস্তি আস্বাদন করাব, যেন তারা ফিরে আসে, (আস-সাজ্দা-২১)।
তাই যখন বান্দা তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরে আসে, তখন আল্লাহ তাআলা ব্যাপকহারে এ রকম ঘাতক মহামারি রোগ সরিয়ে নেন। যেমন কুরআন শরীফে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ . অর্থ : এবং (হে নবী) আল্লাহ এমন নন যে, আপনি তাদের মধ্যে বর্তমান থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তিনি এমন নন যে, তারা ইস্তিগফারে থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেবেন, (আনফাল-৩৩)।
তেমনি আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদের সূরা আম্বিয়াতে হযরত ইউনুস (আ.)-এর একটি দুআ উল্লেখ করেছেন, لا إِلَهَ إِلاَّ أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ . তার তাফসীর ও ব্যাখ্যা করে তাফসীরে ইবনে কাসীরে ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) লিখেন যে, হযরত ইউনুস (আ.) যখন তাঁর জাতিকে তাঁর ধর্মের প্রতি দাওয়াত দিয়েছিলেন, তখন তারা তাঁর ধর্মকে অস্বীকার করতঃ তাঁর উপর ঈমান আনেনি। তখন হযরত ইউনুস (আ.) তাদেরকে বলেছিলেন, তোমরা যদি তিন দিনের মধ্যে আমার ধর্ম গ্রহণ করে ঈমান না আনো, তা হলে তোমাদের উপর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে কঠিন আযাব নাযিল হবে। অতঃপর তারা তিন দিনের মধ্যে ঈমান আনেনি। কিন্তু তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও কোন আযাব নাযিল হয়নি। তখন ইউনুস (আ.) দেশ ত্যাগ করে চলে যান। এদিকে তাঁর জাতি আল্লাহ তাআলার আযাবের কিছু লক্ষণ দেখলো। তখন তারা নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর এবং গবাদি পশু ইত্যাদি সবকিছু নিয়ে পাহাড়ের দিকে চলে গেলো। সেখানে দুধের শিশু ও গবাদি পশু অনাহারে কান্নাকাটি ও চিৎকার করছিল। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের তাওবা-ইস্তিগফার ও কান্নাকাটির করুণ অবস্থা দেখে ঐ আযাব উঠিয়ে নিলেন। হাদীস শরীফেও এরকম আরো অনেক ঘটনা রয়েছে।
কিন্তু যদি বান্দা আল্লাহর নিকট তাওবা-ইস্তিগফারের পরিবর্তে আল্লাহর নাফরমানি ও গুনাহের কাজ অব্যাহত রাখে, তখন আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ব্যাপকভাবে আযাব নাযিল করেন। তখন ভাল মানুষও বাঁচতে পারে না এবং তাদের দুআ কবুল হয় না। নবী কারীম (স.) ইরশাদ করেন-
أوحي الله عز و جل إلى جبريل عليه السلام أن أقلب مدينة كذا و كذا بأهلها : فقال يا رب إن فيهم عبدك فلانا لم يعصك طرفة عين: فقال : اقلبها عليه و عليهم فإن وجهه لم يتمعر في ساعة قط
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা জিবরীল (আ.)-এর নিকট অহী পাঠালেন যে, অমুক অমুক শহরকে তার বাসিন্দাসহ উল্টিয়ে দাও। অতঃপর তিনি বললেন, হে প্রভু! তাদের মধ্যে তোমার অমুক বান্দা আছে, যে এক মুহূর্তের জন্যও তোমার নাফরমানি করেনি। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বললেন, তার উপর এবং সকলের উপর উল্টিয়ে দাও, কারণ এরকম নাফরমানি দেখে তার চেহারা কখনো এক মুহূর্তের জন্যও মলিন হয়নি। (বায়হাকী, হাদীস নং- ৭৫৯৫)। তেমনি আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَاتَّقُواْ فِتْنَةً لاَّ تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنكُمْ خَآصَّةً وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ .
অর্থ : এবং সেই বিপর্যয়কে ভয় কর, যা বিশেষভাবে তোমাদের মধ্যে যারা জুলুম করে কেবল তাদেরকেই আক্রান্ত করবে না। জেনে রেখ! আল্লাহর আযাব সুকঠিন, (আনফাল-২৫)।
অতএব, বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ এমন করুণ পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় হলো, আল্লাহর নাফরমানি ছেড়ে আল্লাহর রহমতের রাস্তা অবলম্বন করা এবং যে সকল পবিত্রস্থানে সর্বদা আল্লাহর রহমতের বারিধারা নাযিল হতে থাকে; যেমন, হারামাইন শারীফাইন, মসজিদ ও দ্বীনী মাদরাসা ইত্যাদি খুলে দেওয়া এবং সেখানে গিয়ে তাওবা-ইস্তিগফার ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত কামনা করা। নতুবা এর চেয়ে আরো ভয়াবহ মহামারি ও আযাবের আশঙ্কা রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাযত করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
নিবেদক
আল্লামা হাফেজ মুফতী আহমদুল্লাহ
প্রধান মুফতী ও মুহাদ্দিস
আল-জামিয়া আল-ইসামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।