ভূমিকা

ভূমিকা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বর্তমানে বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার দু’টি ধারা চলছে। ফলে দেশের সমস্ত মাদ্রাসা দু’টি শ্রেণীতে বিভক্ত। এক শ্রেণীর মাদ্রাসা সরকার কর্তৃক পরিচালিত বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড-এর তত্ত্বাবধানে চলছে। এ মাদ্রাসাগুলো সরকারী পাঠ্যসূচী অনুসরণ করে এবং সরকারী অনুমোদন ও সরকারী সাহায্যে পরিচালিত হয়ে থাকে।

অপর শ্রেণীর মাদ্রাসাসমূহ দ্বীনী শিক্ষা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে নিজস্ব বলিষ্ঠ পাঠ্যসূচী ও কর্মসূচী অনুসরণে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে চলছে। এ মাদ্রাসাগুলো আমাদের দেশে “কাওমী মাদ্রাসা” নামে পরিচিত।

এ কাওমী মাদ্রাসাগুলোকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, এগুলোর তত্ত্বাবধান এবং পাঠ্যসূচীসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর ক্ষেত্রে এগুলোর মাঝে সামঞ্জস্য ও ঐক্য বহাল রাখার লক্ষ্যে বিগত ১৩৭৯ হিজরী মোতাবেক ১৯৫৯ ইংরেজী সনে ‘আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম’-এর প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুফতি আজীজুল হক (রহ.) এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মদারিস (কাওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড), বাংলাদেশ’। তখন থেকে কাওমী মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে শুরু হয় বিরাট আলোড়ন। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এ যাবৎ শত শত মাদ্রাসা এই আঞ্জুমানের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে।

অত্র আঞ্জুমানের পরিচালনাধীন মাদ্রাসাগুলোর পাঠ্যসূচী প্রণয়ন, কেন্দ্রীয় পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ প্রদান, এগুলোর জন্য পরিচালনা পরিষদ গঠন, বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ নিরীক্ষণ, পরিচালক ও শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ-নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের বার্ষিক পরিদর্শন এবং জরুরী অবস্থায় এগুলোর আর্থিক সাহায্যসহ মাদ্রাসাগুলোর সর্বপ্রকার তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ অত্র আঞ্জুমান করে আসছে।

আঞ্জুমান প্রতিষ্ঠার পর এ মাদ্রাসাগুলোর পরিচালনাপদ্ধতি স্বরূপ একটি সংবিধান রচিত হয় মরহুম প্রতিষ্ঠাতার জীবদ্দশায়, উর্দু ভাষায় “দস্তুরে আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মদারিস” নামে। কিন্তু দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই সংবিধানের সংশোধন এবং তাতে অনেক বিষয় সংযোজনের প্রয়োজন দেখা দেয়। তদুপরি আমাদের মাতৃভাষায় সংবিধান রচনার দাবী উত্থাপিত হতে থাকে। পরিচালানাধীন মাদ্রসাগুলোর পক্ষ থেকে অনুরূপ পরিস্থিতিতে অত্র আঞ্জুমানের নজীরবিহীন উন্নয়ন ও উৎকর্ষের অগ্রদূত হযরত আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুস (রহ.) এর জীবদ্দশায় ২৫/৬/১১ হি. মোতাবেক ১২/১/৯১ ইং তারিখে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আঞ্জুমানের শো’রার সাধারণ অধিবেশনে বাংলা ভাষায় একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কাওমী মাদ্রাসা সংবিধান রচনার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আর খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করার জন্য ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি দীর্ঘদিন চিন্তা-ভাবনা ও পারস্পরিক আলোচনা-পর্যালোচনার পর বিগত ২৬/৩/১৩ হি. তারিখে সাব-কমিটির সর্বশেষ অধিবেশনে একটি চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্য মজলিসে শো’রার বরাবর পেশ করা হয়। অতঃপর মজলিসে শো’রার বিগত ১৭/৬/১৩ হি. মোতাবেক ১২/১২/৯২ ইং তারিখে আঞ্জুমানের তদানিন্তন সভাপতি হযরত মাওলানা মুহাম্মদ হারুন ইসলামাবাদী সাহেব (রহ.) এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে খসড়াটি পঠিত হয় এবং বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন-সংযোজনের পর তা “কাওমী মাদ্রাসা সংবিধান বাংলাদেশ” রূপে অনুমোদন লাভ করে। আর উক্ত তারিখ থেকে সংবিধানের কার্যকরীকরণ এর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তদুপরি উক্ত তারিখ থেকে এ সংবিধানের পরিপন্থী পূর্বের যাবতীয় দস্তুর, সংবিধান ও আইন-কানূন রহিত ঘোষিত হয়। পরবর্তীতে মজলিসে শো’রার বিভিন্ন অধিবেশনে বিভিন্ন সংশোধনী অনুমোদিত হয়।

প্রকাশ থাকে যে, অধিবেশনে এ সংবিধানের আরবী নাম ঘোষিত হয়, “দস্তুরুল মাদারিস আল-ইসলামিয়্যাহ আল-আহলিয়্যাহ বাংলাদেশ”।

আঞ্জুমানের পরিচালনাধীন প্রতিটি কাওমী মাদ্রাসার জন্য অত্র সংবিধান অনুসরণ এবং এর আইন কানুনগুলোর সার্বিক বাস্তবায়ন অপরিহার্য গণ্য হবে।।

রাব্বুল আ’লামীন আমাদের সকলকে দ্বীনী শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম পরিচালনার মানসে অত্র সংবিধানের মূল্যায়ণের তাওফীক দান করুন। আমীন।

মুহাম্মদ আব্দুল হালীম বোখারী

সাধারণ সম্পাদক,

আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মদারিস বাংলাদেশ।

১/৭/১৪৩০ হি.

 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on skype
Skype
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সংবাদ

নোটিশ