ফ্রান্সে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ; জামিয়া পটিয়ার পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ!
ফ্রান্সের প্যারিসে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অবমাননাকর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার শায়খুল হাদীস ও মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি আব্দুল হালীম বোখারী(হাফিজাহুল্লাহ)। সংবাদমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে আল্লামা বোখারী (হাফিজাহুল্লাহ) বলেন, ফ্রান্সে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা.-কে অবমাননা করে মুসলমানদের কলিজায় আঘাত করা হয়েছে। মুসলমানদের প্রাণের চেয়েও প্রিয় নবী সা.-এর সাথে ফ্রান্সের এমন হীন আচরণে গোটা বিশ্বমুসলিম আজ বিক্ষুদ্ধ ও মর্মাহত। আমরা জামিয়া পটিয়ার সকল ছাত্র-শিক্ষক তাদের এমন ধৃষ্টতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সর্বস্থরের জনসাধারণকে ফ্রান্সের সকল পণ্য বর্জন করার আহবান জানাচ্ছি এবং বাংলাদেশ সরকারকে অনতিবিলম্বে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য যে, ফ্রান্সের ম্যাগাজিন শার্লি এবদো’র(৩০শে সেপ্টেম্বর) সর্বশেষ সংস্করণের প্রচ্ছদে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ব্যঙ্গ করে আঁকা ১২টি কার্টুন ছাপা হয়। এর পক্ষকাল পরে ফ্রান্সের একজন স্কুল শিক্ষক ক্লাসে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মহানবীকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে। পরবর্তীতে গত জুমাবার ওই শিক্ষক চেচেন এক যুবকের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। তাকে সেখানেই গুলি করে হত্যা করা হয়। তারপর থেকে ফ্রান্সের জুড়ে চলছে মুসলিম কমিউনিটির বিরুদ্ধে সরকার ও বিভিন্ন উগ্র জাতীয়তাবাদীদের হামলা ও কঠোর সব পদক্ষেপ। ফরাসি প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। প্রকাশ্য জনসভায় তিনি মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ অব্যহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট চলতি মাসের শুরুতে সর্ব প্রকার শিষ্টাচার ভেঙে ইসলামের বিরুদ্ধে যে ঘৃণ্যবাক্য উচ্চারণ করেছে, তা সকলের নিকট অপ্রত্যাশিত। তিনি ইসলামকে গোটা পৃথিবীর জন্য ‘সংকট’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
আমরা লক্ষ্য করেছি যে, ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে পরিচিত ‘ফ্রান্স’দেশটি তাদের যথাযথ অবস্থান ধরে রাখতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তাদের ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড বরাবরই মুসলমানদের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে চলছে। কষ্ট দিচ্ছে মুসলিম উম্মাহকে। প্রিয় নবী সা.-কে নিয়ে এ ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ! তাদের এই ধৃষ্টতা যেন আগের সব মুসলিম বিদ্বেষ ছাড়িয়ে গেছে ।
মূলতঃ এ ধরনের ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনগুলো ২০০৫ সালে প্রথম প্রকাশ করেছিল ডেনমার্কের ‘জিল্যান্ড পোস্ট’ পত্রিকা। এরপর কয়েকবার ফরাসি এই ‘শার্লি এবদো’ ওই ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনগুলো ছাপায়। ২০১৫ সালে মহানবীকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনগুলো প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। সারা বিশ্বের মুসলমানরা বিক্ষোভ করেন। পাঁচ বছর পর মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নাম দিয়ে তারা আবারো প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর শানে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করলো।
আমাদের বিশ্বাস, রাসূলুল্লাহ সা.-এর সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বিশ্বনবির মর্যাদা, সম্মান ও আলোচনাকে সবার উর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ বিষয়গুলো ঘোষণা করেছেন। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন-– وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ ‘আর আমি আপনার আলোচনাকে সুউচ্চ করেছি।’ (সুরা আলাম নাশরাহ : আয়াত ৪) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, – وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৭)।
আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করতে চাই, ফ্রান্সসহ বিশ্বের যেসব দেশ ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে এসব ধৃষ্টতা প্রদর্শন করছে, এতে তাদের দীনতা, অজ্ঞতা ও অসহায়ত্বই বেশী প্রকাশ পেয়েছে। পশ্চিমাবিশ্ব প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধন করতে সক্ষম হলেও সভ্যতার কাছেও পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে আমাদের কর্তব্য হলো, একদিকে ফ্রান্সের এমন ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। অপরদিকে বিশ্বব্যাপী মানবজাতির নিকট বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ সা.-এর সীরাত ও উত্তম আদর্শগুলো তুলে ধরা। যেন তারা জানতে পারে, বিশ্বমানবতার জন্য কেমন ছিলেন প্রিয় নবী সা.। এ ক্ষেত্রে সোস্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন আধুনিক প্রচার মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাপী একটি গণজাগরণ সৃষ্টি করা একান্ত কর্তব্য।