প্রসঙ্গ: কুরবানী করার সময়সীমা

প্রসঙ্গ: কুরবানী করার সময়সীমা

সমস্যা: আমরা জানি, কোরবানী তিন দিন করা যায় : ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্ব্। কিন্তু একটি বইয়ে দেখলাম,কোরবানীর সময় চারদিন : ১০ যিলহজ্ব, এরপর আরো তিন দিন। ঐ বইয়ে এটাকেই সঠিক বলা হয়েছে এবং জুবাইর ইবনে মুতয়িম রা.-এর সূত্রে একটি হাদীসের উদ্ধৃতিও দেওয়া হয়েছে। আর তিন দিনের কথাটাকে বলা হয়েছে ভিত্তিহীন।

ঐ বইয়ের আলোচনা পড়ে সংশয়ে পড়ে গেছি। সঠিক সমাধান জানতে চাই।

সমাধান: কোরবানীর সময় তিন দিন : ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ্ব। এটি সহীহ ‘মারফূ হুকমী’ হাদীসে স্পষ্টভাবেআছে, যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকার। তদ্রূপ সাধারণমারফূ হাদীস দ্বারাও তা প্রমাণিত।

সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমসহ হাদীসের প্রসিদ্ধ কিতাবসমূহে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লামের ঐ বিখ্যাত হাদীস বিভিন্ন সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যাতে তিন রাতের পর ঘরে কোরবানীরগোশত রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র মানুষের সহায়তা। কারণ ঐ বছর ঈদুল আযহার সময়আশপাশ থেকে অনেক দরিদ্র মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। সহীহ বুখারীতে ঐ হাদীসের পাঠ এই-

من ضحى منكم فلا يصبحن بعد ثالثة وبقي في بيته منه شيء.

-সহীহ বুখারী, কিতাবুল আযাহী, বাব : ১৬, হাদীস : ৫৫৬৯

সহীহ মুসলিমে হযরত জাবির রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসের পাঠ এই-

كنا لا نأكل من لحوم بدننا فوق ثلاث مني، فارخص لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : كلوا وتزودوا …

-সহীহ মুসলিম, কিতাবুল আযাহী, হাদীস ৫০৬৭

এ হাদীস থেকে বোঝা যায়, শরীয়তের দৃষ্টিতে কুরবানীর সময় তিন দিন। তবে এই সময়ের পরও কোরবানীরগোশত সংরক্ষণের যে সাধারণ বৈধতা ছিল একটি বিশেষ সামাজিক প্রয়োজনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম তা রহিত করে দিয়েছিলেন পরে আবার তার অবকাশ প্রদান করেন। ঐ অবকাশের।হাদীসগুলোতে কোথাও একথা নেই যে, তিনি কোরবানীর গোশত সংরক্ষণের অবকাশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেচতুর্থ দিনও কোরবানী করার অনুমতি দিয়েছেন।

قال الإمام أبو بكر الرازي الجصاص : فدلت هذه الأخبار على أن جواز الأضحية مقصور على هذه الأيام، لأنه إذا كان منهيا عن تبقية اللحم أكثر من ثلاث والذبح لا محالة قبل ذلك علمنا أن الذبح مقصور على ثلاث.

وقد روي في بعض ألفاظ حديث علي رضي ا لله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى أن يبقى عندكم من نسككم شيء بعد الثلاث، فهو على الحي والمذبوح جميعا، لأن اللفظ يتناولهما. انتهى

وقال الإمام ابن قدامة الحنبلي في المغني : ولنا أن النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن ادخار لحوم الأضاحي فوق ثلاث، ولا يجوز الذبح في وقت لا يجوز ادخارالأضحية إليه. انتهى

-শরহু মুখতাসারিত তহাবী, জাসসাস ৭/৩৩২-৩৩৩; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৮৭

সাহাবায়ে কেরামও সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, কোরবানীর সময় তিন দিন বলাবাহুল্য, এটা তাঁরা আল্লাহর রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ থেকেই গ্রহণ করেছেন। কারণ ইবাদতের সময়সীমা তো নিছক যুক্তি-বুদ্ধির দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে না। তাই এ ধরনের বর্ণনাকে পরিভাষায় ‘মারফূ হুকমী’ বলে, যা মারফূহাদীসেরই একটি প্রকার।

সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্য

১.

হযরত আনাস রা. বলেন, ‘যবেহ (কোরবানী) করা যায় ঈদের (দিনের) পর আর দুই দিন।’

الذبح بعد العيد يومان

এই বর্ণনার সনদ সহীহ।

দেখুন : আহকামুল কুরআন, তহাবী, ২/২০৬; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৯/২৯৭;আলমুহাল্লা, ইবনে হাযম ৭/৪৯৯

২.

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, ‘ঈদুল আযহার (দিনের) পর আযহা (কুরবানী) দুই দিন।’

الأضحى يومان بعد يوم الأضحى.

এই বর্ণনার সনদ সহীহ, বরং আসাহহুল আসানীদ (শ্রেষ্ঠ সনদ)-এর অন্যতম। দেখুন : আল মুয়াত্তা, ইমামমালিক باب الضحية عما في بطن المرأة، وذكر أيام الأضحى হাদীস : ২০৩৮

৩.

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, ‘আযহা (কোরবানী) তিন দিন।’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘কোরবানী করাযায় ইয়াওমুন নহর (কোরবানীর দিন)-এর পর আরও দুই দিন।’

الأضحى ثلاثة أيام، وفي لفظ : النحر يومان بعد يوم النحر، وأفضلها يوم النحر.

এ বর্ণনা বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে। ইবনুত তুরকুমানী রাহ. তহাবীর সনদকে ‘জাইয়েদ’তথা উত্তম বলেছেন।

দেখুন :আহকামুল কুরআন তহাবী, আল জাওহারুন নাকী, (সুনানে কুবরা বাইহাকীর সাথে মুদ্রিত) ৯/২৯৬

৪.

আবু হুরায়রা রা. বলেন, ‘আযহা (কোরবানী) হচ্ছে তিন দিন।’

الأضحى ثلاثة أيام

-আল-মুহাল্লা, ইবনে হাযম,ইলাউস সুনান ১২/২৩২-১৩৩

৫.

আলী ইবনে আবী তালিব রা. থেকে বর্ণিত, ‘কোরবানী তিন দিন।’

النحر ثلاثة أيام، وفي لفظ النحر ثلاثة أيام أفضلها أولها.

-আল-মুয়াত্তা, ইমাম মালিক, প্রাগুক্ত ; আহকামুল কুরআন, তহাবী ২/২০৫; ই’লাউস সুনান ১২/২৩২

৬.

ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, ‘কোরবানী শুধু এই তিন দিনই করা যায়।’

إنما النحر في هذه الثلاثة الأيام

-আল-মুহাল্লা, ইবনে হাযম, ইলাউস সুনান ১২/২৩২

(ফতোয়া নং ৩৮)

উত্তর লিখনেঃ

★ ফতওয়া বিভাগ ★

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।

ই-মেইল: daruliftapatiya@gmail.com

পেইজলিংক: @islamiclaw.patiya

ফোন নং:

০১৮৫৬৬১৮৩৬৭

০১৭০৩৮৩৯৯৯৭

মুফতি আহমদুল্লাহ দা.বা.

০১৭১৫৫০১৫৪০

মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া

০১৮১৯৬৬৫১১৩

মুফতি জসিম উদ্দীন দা.

০১৮১১৬১০৫৫৪

মুফতি মানযুর সিদ্দিক

০১৮১৯৯৮০৯৮৬

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on skype
Skype
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সংবাদ

নোটিশ