‘আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ (আল্লাহ) নেই। তিনি দয়াময়, অতি দয়ালু। “নিঃসন্দেহে ইসলামই আল্লাহর একমাত্র দ্বীন”(আলে ইমরান-১৯)
সর্বকালের, সর্বযুগের চিরন্তন, শাশ্বত, সুন্দর ইসলামই দিতে পারে বিশ্বমানবতার মুক্তি ও কল্যাণ এবং মানবজীবনের সকল সমস্যার সমাধান। ইসলাম ব্যতীত পৃথিবীর সকল ধর্ম, মত ও পথ ভ্রান্ত, অসার ও মিথ্যা। সকল মানুষের সকল আশার আলো মানবীয় চরিত্র ও আদর্শের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত যে পবিত্র মহামানবের মধ্যে বিদ্যমান তাঁরই নাম ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)। মানব জীবনের চির কাঙ্ক্ষিত শান্তি ও সমৃদ্ধি, পরিত্রাণ ও পুরস্কার তাঁরিই অনুসৃত নীতি ও আদর্শের মধ্যে নিহিত। তিনিই ইসলামের একনিষ্ট বাহক, প্রচারক এবং আল্লাহর মনোনীত সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বশেষ নবী ও রাসূল। সুতরাং ইসলাম শাশ্বত, চিরন্তর ও সার্বজনীন ধর্ম।
পবিত্র কুরআনে পাকে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করে কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না। আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।” (সূরা আলে ইমরান-৮৪) অন্যত্র এরশাদ হয়েছে “কিতাবীদরে মধ্যে যারা কুফরী করে, তারা এবং মুশরিকরা জাহান্নামের অগ্নিতে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; উহারই সৃষ্টির অধম। “আরো এরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাসী (ঈমানদার) ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। তাদের প্রতিপালকের নিকট আছে তাদের পুরস্কার-স্থায়ী জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট। ইহা তার জন্যে যে তার প্রতিপালককে ভয় করে।” (সূরা বায়্যিনা, ৬,৭,৮) বিশ্বব্যাপী মুসলিম মিল্লাতের উপর চলছে নিষ্ঠুর নির্যাতন ও নিপীড়ন। তবু বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের অসংখ্য মানুষ গ্রহণ করছে পবিত্র ইসলাম। ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানধর্মের মুখোশ উন্মোচিত হওয়ার ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী আজ জীবনের চরম পঙ্কিলতা-হিরোইন, মদ্যপান, জুয়াখেলা, খুন-রাহজানী, জেনা-ব্যভিচার, বিলাসিতা ইত্যাদি জঘন্য পাশবিক অমার্জনীয় অপরাধ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে পবিত্র কালেমা পড়ে মুসলামানদের সাথে আত্মিক ও প্রেমের বন্ধন রচনা করেছে। অপরদিকে ইসলাম ও মুসলমানদের চিরশক্র ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান জাতি ইসলাম ও মুসলমানদের অতীত-বর্তমান ঐতিহ্যকে নিশ্চিহ্ন ও ধ্বংস করার প্রাণান্ত সংগ্রামে লিপ্ত। বিশ্বব্যাপী খ্রিষ্টান ধর্মের ব্যাপক প্রচারের পাশাপাশি আমাদের দেশের অশিক্ষিত দারিদ্র্য পীড়িত দুঃস্থ মানুষকে অর্থ ও সম্পদের লোভ দেখিয়ে খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করা হচ্ছে।
আমাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ও উপজাতি অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চলেও ওরা গড়ে তুলেছে আ্গ্রাসী খ্রিষ্টান মিশনারী সেন্টার। কিন্তু সত্যের সন্ধানীরা সকল স্বার্থ ও ভয়-ভীতির প্রতি ভ্রুকটি প্রদর্শন করে পবিত্র ইসলাম গ্রহণ করছে। খ্রিষ্টান মিশনারীর এ অপতৎপরতা প্রতিরোধে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়ার ভূতপূর্ব মহাপরিচালক, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শায়খ ইউনুছ সাহেব রাহ. সুখ বিলাস ও বান্দারবানে দুটি ইসলামী মিশনারী সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। হেদায়তের আলো থেকে বঞ্চিত মানুষের কাছে হেদায়তের আলো পৌঁছানো এবং ধর্মান্তরিত (বাতিল ধর্মত্যগী) নওমুসলিমদের সবরকম সহযোগিতাই ছিল তার অন্যতম লক্ষ্য। ‘নও মুসলিম পুনর্বাসন কেন্দ্রের’ মাধ্যমে তিনি তার জীবদ্দশায় অনেক নও মুসলিমদের নৈতিক, মানবিক, আত্মিক ও আর্থিক উন্নতি সাধনের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে ছিলেন। কিন্তু তাঁর তিরোধানের ফলে তার স্বপ্ন ও পরিকল্পনা যথাযথ বাস্তবায়িত করা যেতে পরেন নি।
মরহুম হাজী সাহেব রহ. এর সে স্বপ্ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারই স্বার্থক ও সুযোগ্য উত্তারাধিকারী আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার সাবেক মহাপরিচালক, হযরত আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ হারুন ইসমাঈল ইসলামাবাদী সাহেব রহ. বিগত ২৬-০৭-১৯৯৮ ইং তারিখে জামিয়ার মেহমানখানায় এক বৈঠক আহবান করেন। উপস্থিত সদস্যবৃন্দ আলোচনা-পর্যালোচনা পূর্বক হাজী সাহেব হুজুরের প্রতিষ্ঠিত ‘নও মুসলিম পুনর্বাসন কেন্দ্র’ এর নতুন নামকরণ করেন ‘নও মুসলিম ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’। এর সার্বিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠ, সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্যে শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কিরাম ও ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি ‘উপদেষ্টা পরিষদ’ ও ‘কার্যকরী পরিষদ’ গঠন করা হয়।
বিগত কয়েক বছরে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, মারমা ও চাকমা উপজাতির অনেক নারী-পুরুষ অত্র ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে পবিত্র ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত এবং তালিকাভূক্ত হন। নও মুসলিমদের সার্বিক উন্নতি ও কল্যাণ বিধানের লক্ষ্যে সুচিন্তিত ও একটি সুপরিকল্পিত কর্মসূচীর মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সর্বস্তরের মুসলমানদের সহযোগিতা থাকলে ইনশা আল্লাহ আমরা সফলতা অর্জন করতে পারবো।