জামিয়া পটিয়ায় ‘তারকীবী মুনাযারা’ অনুষ্ঠিত

জামিয়া পটিয়ায় ‘তারকীবী মুনাযারা’ অনুষ্ঠিত

গতকাল ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৩হিজরী মোতাবেক ৩১শে মে ২০২২ খৃষ্টাব্দ রোজ মঙ্গলবার আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার জামাতে পাঞ্জুমের উদ্যোগে তারকীবী মুনাযারা (কুরআনের আয়াতের বাক্য-বিশ্লেষণ বিতর্ক অনুষ্ঠান) অনুষ্ঠিত হয়।  সকাল ৭ ঘটিকার সময় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়ে রাত ১২টায় সমাপ্ত হয়।

মূলতঃ  আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হলো পবিত্র কুরআন-হাদীস এবং ফিকহের উপর পাণ্ডিত্য অর্জন করা। তবে এই বিষয়গুলোর উপর পরিপূর্ণ দক্ষতা ও পরিপক্কতা অর্জনের জন্য আমাদেরকে ভূমিকাস্বরূপ আরো কিছু শাস্ত্র পড়তে হয়। এই জন্য আমাদের দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে মানতিক, ফালসাফা এবং নাহু-সরফও শিক্ষা দেয়া হয়। এই শাস্ত্রগুলো আমাদের মূল লক্ষ্য নয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো কুরআন এবং হাদিসে পাণ্ডিত্য অর্জন করা। তবে কুরআন –হাদিসে পাণ্ডিত্য অর্জনের পূর্ব শর্ত হলো,  আরবি ভাষা ও সাহিত্যে দক্ষতা অর্জন করা।

আর তারকীবী মুনাযারার মূল লক্ষ্য হলো ইলমে নাহুর প্রেক্টিকেল অনুশীলন করা। এখানে পবিত্র কুরআনে কারীমের তারকীব-বাক্যবিশ্লেষণ নিয়ে আলোচনা হয়। যাকে আরবীতে ‘ইরাব’ বলা হয়। পবিত্র কুরআনের যথাযথ অর্থ ও মর্ম উদ্ঘাটন করা ও তার প্রকৃত তাফসীর বুঝার জন্য আমাদেরকে আরবি ভাষার প্রধান মেরুদণ্ড ‘ইলমে নাহু’তে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। যদি আমরা ইলমে নাহুতে দক্ষতা অর্জন করতে পারি তবেই কুরআন-হাদিসের তারকীব, তাহকীক, শানে নুযুল, তাফসীর ইত্যাদি বুঝতে সক্ষম হবো। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআনের সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানকে যথাযথভাবে হৃদয়ঙ্গম করার তাওফীক দান করুন, আমীন।

উল্লেখ্য যে, এই বছর জামিয়া পটিয়ার বিভিন্ন বিভাগে ছাত্রদের অনুশীলনমূলক  মুনাযারা অনুষ্ঠিত হয়। জমাতে হাস্তুমের ছাত্ররা ‘মিযান’ এবং  জামাতে হাফ্তুমের শিক্ষার্থীরা ‘পাঞ্জে গাঞ্জ’ কিতাবের মুনাযারা করেছে। জামাতে শাশুম ও জামাতে পাঞ্জুমের ছাত্ররা কুরআন মাজীদের তারকীবী মুনাযারা করেছে এবং শর্টকোর্স বিভাগের ছাত্ররাও বিভিন্ন বিষয়ে মুনাযারায় অংশগ্রহণ করেছে।

গতকালের ‘তারকীবী মুনাযারা’ সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন জামাতে পাঞ্জুমের দায়িত্বশীল মাওলানা সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জামিয়ার নায়েবে মুহতামিম আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযা, জামিয়ার মুঈনে মুহতামিম আল্লামা আবু তাহের নদবী, জামিয়ার সিনিয়র মুফতি ও মুহাদ্দিস মুফতি শামসুদ্দিন জিয়া, আল্লামা আমিনুল হক, সহকারি শিক্ষা পরিচালক আল্লামা যাকারিয়া আল-আযহারী, আল্লামা নুরুল কবীর আনসারী, আল্লামা আকতার হোসাইন আনোয়ারী, মাওলানা জাফর সাদেক, মাওলানা নাসিরুদ্দিন, মাওলানা মাসূম, মাওলানা ত্বহা দানিশ, মাওলানা ইবরাহীম, মাওলানা ঈসমাঈল, মুফতি আব্দুন নাফে, মাওলানা আহমদ গণী, মাওলানা বুরহানুদ্দিন প্রমুখ।

জামিয়ার নায়েবে মুহতামিম আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযা (হাফি.) ছাত্রদের উপস্থাপনায় মুগ্ধ হয়ে ৫০০০ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন। অতঃপর তিনি তাঁর সৌজন্য বক্তব্যে বলেন, এই ধরণের মুনাযারা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কোমলমতী ছাত্ররা; যারা এখন যথানিয়মে তফসীরের কিতাবাদী পড়ার সুযোগ পায়নি তারাও ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়ে থাকে। যখন তাদেরকে ‘তাফসীরে রূহুল মা’আনী, ‘ইরাবুল কুরআন’, ‘ইমলাউ মা মান্না বিহির রহমান’ ইত্যাদির মত গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদি পড়ে কুরআন মাজিদের এরাব ও তারকীবী এবং বাক্যবিশ্লেষণ ও সমাধান বের করতে দেখা যায়, তখন অন্তরে এক অপূর্ব আনন্দ অনুভূত হয়।  অন্তর থেকে দোয়া আসে আল্লাহ যেন এমন মেহনতী ছাত্রদেরকে কুরআন-সুন্নাহর সঠিক ইলম দান করেন এবং দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত রাখেন, আমীন। মহান প্রভুর দরবারে ফরিয়াদ করি তিনি যেন এমন ইলমী উপকৃত হওয়ার দ্বারগুলো আমাদের জন্য উন্মুক্ত রাখেন। জামিয়ার সকল উপকারী বিভাগকে সজীব এবং সচল রাখেন। জামিয়ার পরিচালকসহ যে সকল মুরব্বিগণ অসুস্থ তাঁদেরকে হায়াতে তায়্যিবা ও সুস্বাস্থ্য দান করেন, আমীন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on skype
Skype
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সংবাদ

নোটিশ