জামিয়া পটিয়ার সকল শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা!
এতদ্বারা জামিয়ার সকল শিক্ষার্থীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বিশ্বময় করোনা ভাইরাসের কারণে কাওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড ‘আল-হাইয়াতুল উলয়া’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া’র সকল বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হলো। কিন্তু যেহেতু শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে তাই ছাত্ররা এদিকে-সেদিক ঘুরা-ফেরা না করে নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করবে এবং পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য যে, করোনা ভাইরাস একটি প্রাণঘাতী রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ১১ মার্চ এটিকে মহামারি ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহামারিকে মু’মিনের জন্য ‘রহমত’ ঘোষণা করেছেন।
عن عائشة -رضي الله تعالى عنها- قالت: سألتُ رسول الله ﷺ عن الطاعون فأخبرني أنه: عذاب يبعثه الله على من يشاء، وأن الله جعله رحمة للمؤمنين، ليس من أحدٍ يقعُ الطاعونُ فيمكث في بلده صابراً محتسباً، يعلم أنه لا يصيبه إلا ما كتب الله له إلا كان له مثل أجر شهيد، رواه البخاري.
হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (মহামারি) প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তখন তিনি আমাকে বলেন, ‘এটি হচ্ছে এক ধরনের আযাব। আল্লাহ যার ওপর তা (মহামারি) পাঠাতে ইচ্ছে করেন, পাঠান। কিন্তু আল্লাহ এটিকে মু’মিনদের জন্য রহমত বানিয়ে দিয়েছেন। অতএব প্লেগ রোগে আক্রান্ত (তেমনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত) ব্যক্তি যদি ধৈর্য ধরে আর এ বিশ্বাস নিয়ে নিজ শহরে (অঞ্চল) অবস্থান করতে থাকে যে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না। তাহলে ওই বান্দার জন্য থাকবে শহীদের সাওয়াবের সমান সাওয়াব।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নং-৩৪৭৪)
অন্য হাদিসে রাসুল্লাহ সা. বলেন, الطَّاعُونُ شَهَادَةٌ لِكُلِّ مُسْلِمٍ. প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে (তেমনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে) মৃত্যু বরণকারী প্রত্যেক মুসলিম শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবেন, (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-৩৬৫২)
অতএব, করোনার কথা শুনেই আতঙ্কিত হওয়া, ভীত-সন্ত্রস্ত্র হওয়া একজন মু’মিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। তবে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উপায়-উপকরণ অবলম্বন করাও তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়। এ ক্ষেত্রে একজন মু’মিনের সর্ব প্রথম করণীয় হলো মহান রবের প্রতি মনোনিবেশ করা। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করা। তাওবা-ইস্তিগফারে আত্ম-নিয়োগ করা। সাথে সাথে বিশেষ কিছু আমলের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার জন্য বর্তমান সময়ের অনেক বিজ্ঞ ফকিহ ও মাকবুল ওলীগণ পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন আল্লামা মুফতি তাকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহ্ এক টিভি সাক্ষাত্কারে বলেন, “তাবলীগ জামাতের সাথে সম্পর্ক রয়েছে এমন একজন নেককার বুযুর্গ ব্যক্তি স্বপ্নযোগে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-র সাথে সাক্ষাতে ধন্য হয়েছেন। সেই স্বপ্নে বর্তমান বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস নামক মহামারী থেকে বাঁচার জন্য রাসূলুল্লাহ সা. তিনটি আমল শিখিয়ে দিয়েছেন।
(১) তিন বার সূরা ফাতিহা পাঠ করা।
( ২) তিন বার সূরা ইখলাস পাঠ করা।
(৩) ৩১৩ বার ﺣَﺴْﺒُﻨَﺎ ﺍﻟﻠّٰﻪُ ﻭَﻧِﻌْﻢَ ﺍﻟْﻮَﻛِﻴْﻞُ পড়া। ( উচ্চারণ: হাসবুনাল্লাহু ওয়ানি মাল ওয়াকীল)
দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন বিষয়ে আরো কয়েকটি দোআ পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন…
- এ দুআগুলো বেশি বেশি পড়ুন…
لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِميْنَ উচ্চারণ, লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নিকুনতু মিনায যোয়ালিমিন।
(অর্থ: আল্লাহ আপনি ছাড়া কোন মা’বুদ নেই, আপনি মহান নিশ্চয় আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত)
اَللّٰهُمَّ ارْفَعْ عَنَّا الْبَلَاءَ وَالْوَبَاءَ
“আল্লাহুম্মা ইরফা’ আন্নাল বালাআ ওয়াল ওয়াবাআ” (অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমাদের থেকে বিপদ ও মহামারী দূর করে দিন
- ঘর থেকে বের হওয়ার সময়
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، فَأَللهُ خَيْرٌ حَافِظاًوَهُوَ أَرْحَمُ الرّٰحِمِيْنْ
উচ্চারণ, ‘আউযু বি কালিমাতিত তাআম্মাতি মিন শাররি মা খালাক’
(অর্থ: পৃথিবীতে সৃষ্ট যাবতীয় অনিষ্ট হতে আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমা সমূহের আশ্রয় নিচ্ছি)
- ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এবং পানাহারের সময় এই দোআ পড়বে….
بِسْمِ اللهِ الذِّيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهٖ شَيْئٌ فِي الْاَرْضِ وَلَا فِيْ السَّمَاءِ وَ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
“বিসমিল্লাহিল লাজি লা ইয়াদুররু মা আ’ সমিহি শাইয়্যুন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামায়ি ওয়াহু আছ ছামীউল আলীম”
(অর্থ: আল্লাহ’র নামের আশ্রয় গ্রহণ করি, যার নামের সাথে আসমান জমিনে কোন জিনিস ক্ষতি করতে পারেনা)
- প্রতি ফরজ নামাজের পরে আয়াতুল কুরসী পড়ে নিজের শরীরে এবং পরিবারের সদস্যদের শরিরে ফুঁক দেওয়া।
আল্লাহ্ আমাদের সকলকে আমল করার তাওফীক দান করুন