আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া চট্টগ্রামের ৬ষ্ঠ মহা-পরিচালক, দেশের অন্যতম প্রাচীন কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশে এর সম্মানিত সভাপতি ও বাংলাদেশ তাহফিজুল কুরআন সংস্থার মহাসচিব আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ দা.বা. বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য প্রথিতযশা আলেমেদ্বীন, স্বর্বজনবিদিত ইসলামিক স্কলার ও ইসলামি অর্থনীতিবিদ, যিনি পঠন-পাঠনের বাইরেও ইসলামী শরিয়াহর বিভিন্ন সেক্টরে একাধারে কাজ করে চলেছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও যিনি আন্তর্জাতিক অসংখ্য সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেছেন এবং সর্বত্র বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এর শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন, এছাড়াও বেশ কিছু ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ বাংলা ছাড়াও আরবি, উর্দু ও ইংরেজীতে সমানভাবে পারদর্শী স্বর্বজনবিদিত একজন ইসলামীক ব্যক্তিত্ব।
প্রারম্ভিক জীবন ও পড়াশুনাঃ
মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ ১৯৭২ সালে কক্সবাজারের উখিয়া থানার ডিগলিয়া পালং গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ইলমী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাওলানা আমির হামযাহ। তিনি নিজ গ্রাম ডিগলিয়া পালং এ কাসেমুল উলুম মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। এরপর তিনি দেশের অন্যতম ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় ভর্তি হোন। এবং উলা (স্নাতক) শ্রেণীতে আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ হতে কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। এরপর একই জামেয়া থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। এবং ১৯৯২ সালে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের অধীনে অনুষ্ঠিত দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর ১৯৯৩ সালে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় উচ্চতর বাংলা সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগ সমাপ্ত করেন। এবং পরবর্তীতে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
আধ্যাত্মিক বিনির্মাণ
আধ্যাত্মিক লাইনে তিনি হযরত পীর ফকীর যুলফিকার নাকশবন্দী হাফি.এর হাতে বাইয়াত।
বৈচিত্রময় কর্মজীবন
শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর কক্সবাজারে দারুস সুন্নাহ মাদরাসায় হাদিসের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। এরপর তিনি সৌদি আরবে চলে যান এবং সেখানে ১৯৯৪ থেকে ২০০০ পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ বছর সৌদি আরবের ধর্ম ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীনে শিক্ষক ও অনুবাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন এবং ২০০১ সালে স্বীয় মাতৃকোড় উপমহাদেশের বৃহত্তম শিক্ষাকেন্দ্র আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এবং শিক্ষকতার বরকতময় ময়দানে সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ২০১৩ সাল থেকে তিনি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরীয়াহ বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অতঃপর ২০২৩ সালে তিনি এই বোর্ডের সভাপতি মনোনীত হন। ২০১৯ সালের ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ তাহফীজুল কুরআন সংস্থার তৎকালীন মহাসচিব মাওলানা রহমতুল্লাহ কাউসার নিজামীর মৃত্যুর পর তিনি সংস্থাটির মহাসচিব নির্বাচিত হন এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি এ দায়িত্ব পালন করছেন। তারপর ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার মজলিসে শুরার এক অধিবেশনে তাকে সহকারী পরিচালক নিযুক্ত করা হয়। ২০ জিলকদ ১৪৪৩ হিজরী মোতাবেক ২১ জুন ২০২২ ইংরেজিতে জামিয়ার মহাপরিচালক মুফতি আব্দুল হালিম বুখারীর ইন্তেকালের পর তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মনোনীত হন। অতঃপর ২০২২ সালের ৭ই জুলাই তিনি মজলিসে শূরা কর্তৃক মাদরাসার মহাপরিচালক মনোনীত হন। ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তাকে আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের মহাসচিব মনোনীত করা হয়।
ইসলামী অর্থনীতিতে তাঁর রয়েছে অসাধারণ সুখ্যাতি। দীর্ঘদিন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের শরীয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০২৩ সালের ৩ জুলাই তাকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের শরীয়াহ সুপারভাইজারি কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। এবং বাংলাদেশে প্রায় সবগুলো দৈনিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এর নিউজ করা হয়।
আল্লামা ওবায়দুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে আরবি ও ইংরেজিতে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা বালাগুশ শারকের প্রধান সম্পাদক এবং বাংলায় প্রকাশিত মাসিক আত-তাওহিদের প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি চট্টগ্রামের হালিশহর বি ব্লক বাইতুল হাকিম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিবের দায়িত্বও পালন করছেন।
বৈদেশিক দাওয়াহ তৎপরতাঃ
আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযয়াহ দক্ষিণ আফ্রিকায় রেডিও ইসলামে প্রোগ্রাম করেন। ২০০৮ সালে মক্কায় মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ আয়োজিত আন্তধর্মীয় সংলাপ শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেন। ২০১২ সালে থাইল্যান্ড ভ্রমণকালে ৩০ টি কলেজ, ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেডিও ও থাই মুসলিম টিভিতে ইসলামবিষয়ক প্রোগ্রামে অংশ নেন। ২০১৩ সালে লেবনেনের বৈরুতে আরব লিগ ও ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রস কমিটির যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মানবিক আইন কোর্সে অংশ নেন। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্টের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে “ধর্মশিক্ষা বিষয়ক সেমিনারে অংশ গ্রহণ করেন ৷ একই বছরে ইন্দোনেশিয়ার আররানিয়ান ইউনিভার্সিটিতে “আন্তর্জাতিক মানবিক আইন” শীর্ষক সেমিনারে স্পীকার হয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন ৷ এবং ২০১৯ সালে মক্কায় মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ আয়োজিত ইসলামে মধ্যপন্থা শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেন।
সম্মাননা
২০১৮ সালের ২২ আগস্ট বিশ্ব মুসলিম লীগ কর্তৃক ‘ইসলামে দয়া ও পরোপকারে তাৎপর্য’ বিষয়ের ওপর ৬৪টি দেশের মুসলিম স্কলারদের প্রবন্ধ গৃহীত হয়, তাদের মধ্যে ৮ জনের প্রবন্ধ নির্বাচিত হয়। ৮ জনের মধ্যে প্রথম অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য মনোনীত হন আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ। বাংলাদেশ থেকে এ কনফারেন্সে তাকে সম্মাননা ও হজ্বের আমন্ত্রণ দেওয়া হয়।
প্রকাশনা
আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ বাংলা ও ইংরেজিতে অসংখ্য বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন, তার রচিত ও সম্পাদিত বই সমূহের মধ্যে রয়েছে:
ইংরেজি
- Charity in Islam : Benefits and Excellences.
- Human Dignity and Dead Body Management in Islam
বাংলা
- কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান
- বিপন্ন নারী
- ইসলাম বনাম সন্ত্রাসবাদ
- খ্রিস্টবাদের নগ্ন ছোবলে আক্রান্ত মুসলিম বিশ্ব
- সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের দিক নির্দেশনা
- রাসূল সা . এর ভালবাসা বনাম অবমাননা
- ব্যবসা বনাম সুদ: প্রেক্ষিত মুসলিম বিশ্ব
- সন্ত্রাসবাদ: কারণ ও প্রতিকার
- মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় মহানবী সা . এর অবদান
- আমাদের তারুণ্য: প্রসঙ্গ ফেইসবুক
- দারিদ্র্যতা একটি বিপদ, যাকাত মুক্তির রাজপথ
- ইয়াবার ভয়াল থাবা: টার্গেট বাংলাদেশ
- কুরআনের আলােকে রাসুল ( সা . )’র মর্যাদা ও অধিকার
- নারী: হিজাবের ছায়ায় ফিরে এসো
- ইলমের মর্যাদা ও উলামায়ে দেওবন্দের অবদান
- ইসলামী সংস্কৃতি বনাম অপসংস্কৃতিইত্যাদি
আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ তাঁর কালজয়ী যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, কর্মতৎপরতা এবং তাঁর আকুণ্ঠ গ্রহণযোগ্যতা, শাহী পোশাকের ভেতরে লুকায়িত বুজুর্গি, সবকিছুতে পুরাতন ও আধুনিকায়নের সমন্বয় ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি জামিয়াকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন নতুন নতুন সফলতার দিকে। জামিয়ার সুষ্ঠু পরিচালনার পাশাপাশি তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে চলেছেন
আল্লাহ তায়ালা এই জামিয়ার উপর তাঁর বরকতময় ছাড়া দীর্ঘ করুন। আমীন।