পহেলা রবিউল আওয়াল ১৪৪৪ হিজরী, মোতাবেক ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২২ খৃষ্টাব্দ রোজ বুধবার বেলা ১১টা হতে ‘আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ’ (কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড)-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ‘আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া’য় বোর্ডের বাৎসরিক সাধারণ সভা, মজলিসে শূরা এবং পরীক্ষা কমিটির যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ডের সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা মুফতী হাফেজ আহমদুল্লাহ (হাফিজাহুল্লাহ)-এর সভাপতিত্বে এবং ইত্তেহাদের দপ্তর সম্পাদক মাওলানা সাইদুল হক সাহেবের সঞ্চালনায় যৌথ সভা অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে উদ্ভোধনী বক্তব্য রাখেন ইত্তেহাদের নব নির্বাচিত মহাসচিব আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ (হাফিজাহুল্লাহ)। তিনি বলেন, আমাদের এ সকল দ্বীনি মাদরাসার মূল আদর্শ হলো, দারুল উলূম দেওবন্দ। দারুল উলূমের উসূল ও নীতিমালা, পাঠ্যক্রম ও পাঠপদ্ধতি অবলম্বন করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। এ সকল দীনী মাদরাসাসমূহের মূল লক্ষ্য হলো, কিতাবুল্লাহ তথা কুরআন-সুন্নাহর পাঠদানের পাশাপাশি ‘রিজালুল্লাহ’ তথা ব্যক্তি গঠন ও আধ্যাত্মিকতার উন্নতি সাধন ও রূহানি তারাক্কি অর্জন করা। তাই আমাদের কওমী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষককে অবশ্যই সুন্নাতের পাবন্দ হতে হবে এবং তাহাজ্জুদের সময় কান্নাকাটির পরিবেশ তৈরী করতে হবে। এবং ছাত্রদের জন্য মোবাইল ব্যবহার একেবারেই পরিহার করতে হবে ।
মহাসচিব মহোদয় বলেন, ইত্তিহাদ বোর্ড ও বোর্ডের কার্যক্রমকে যুগোপযোগী করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষপ গ্রহণ করা ও বোর্ডের নিজস্ব প্রকাশনীর মাধ্যমে বোর্ডের বই-পত্র প্রকাশ করা একান্ত প্রয়োজন। তাই বোর্ডের জন্য জনবল নিয়োগ দিতে হবে। তেমনি মারকাযী পরীক্ষায় মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ ছাত্রদের কোটা নির্ণয় ও হায়আতুল উলয়ার পক্ষ থেকে জামাতের নাম নির্ধারণ ও পাঠ্যক্রম ইত্যাদি বিষয়ে একটি সাব-কমিটি গঠন করতে হবে এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিত্ত্বে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
মহাসচিবের বক্তব্যের পর ১৪৪২-৪৩হিজরী শিক্ষা বর্ষের মারকাযী পরীক্ষায় মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ ছাত্রদেরকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য যে, গতবারের মতো এবারের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও ‘‘আল্লামা আবুল খাইর ফাউন্ডেশন’’-এর চেয়ারম্যান মাওলানা সুহাইল সালেহ (হাফিজাহুল্লাহ)-এর পক্ষ থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রদের প্রত্যেককে ১০০০ টাকাসহ মূলবান কিতাবাদি প্রদান করা হয়।
উক্ত সভায় সর্বস্মতিক্রমে নিম্নের সিদ্ধান্তগুলো গৃহিত হয়;
১. আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ এর সফল সাবেক মহাসচিব আল্লামা মুফতী আব্দুল হালীম বোখারী (রহ.)-এর মাগফেরাত কামনা করা হয়।
২. সর্ব সম্মতিক্রমে জামিয়া প্রধান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ (হাফি.)-কে বোর্ডের মহাসচিব নিযুক্ত করা হয়।
৩. জামিয়ার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা হাফেজ জাফর সাদেক (হাফি.)-কে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিযুক্ত করা হয়।
৪.গত বছরের হিসাব-নিকাশ পর্যালোচনা ও কার্যক্রমের বিবরণ শুনানোর পর অনুমোদন দেয়া হয়।
৫. চলতি বছর ইত্তেহাদের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা ৬ই শাবান থেকে আরম্ভ হয়ে ১১ই শাবান সমাপ্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
৬. গতবছরের ন্যায় এ বছরও নিম্ন বর্ণিত হারে মারকাযী পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করা হয়; জামাতে হাস্তুম-৫০০। জামাতে শাশুম-৬০০। জামাতে ছাহারুম-৭০০। জামাতে উলা-কামেলাইন-৮০০। (ইত্তেহাদের তত্ত্বাবধানে) দাওরায়ে হাদীস ও তাজবীদ-১০০০।
৭. পরীক্ষার্থীদের নাম-ঠিকানা সহ একসাথেই ১৮ই জুমাদাল উখরা ১৪৪৪ হিজরীর মধ্যে ইত্তেহাদ অফিসে ফি জমা করতে হবে।
৮. পরীক্ষার হল, পরীক্ষক ও হল নিয়ন্ত্রক (নাজুর-মুরাকিব)-এর নাম চূড়ান্ত করা হয়।
পরিশেষে বোর্ডের সিনিয়র নায়েবে সদর ও জামিয়ার শায়খুল হাদীস আল্লামা হাফেজ মুফতী আহমদুল্লাহ (হাফি.)-এর দুআ ও মুনাজাতের মাধ্যমে যৌথ সভা সমাপ্ত হয়।